বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতো এমন ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়েছে ফেসবুক - BBC News বাংলা (2024)

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতো এমন ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়েছে ফেসবুক - BBC News বাংলা (1)

ছবির উৎস, SOPA IMAGES

বাংলাদেশের মোট ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ ফেসবুক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে এই সামাজিক মাধ্যমটির মূল প্রতিষ্ঠান মেটা তাদের চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চাশটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট।

এই রিপোর্টে বলা হয়েছে ভুয়া পরিচয়ের এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর বিষয়ে মেটা যে অনুসন্ধান করেছে তাতে এগুলোর সাথে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

সিআরআই আওয়ামী লীগের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি তার ওয়েব সাইটে বলেছে যে তাদের লক্ষ্য হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের জাতীয় নীতি নিয়ে জন আলোচনার জন্য প্লাটফর্ম তৈরি করা। এজন্য উঁচু মানের গবেষণাসহ তাদের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলা আছে ওয়েবসাইটটিতে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া এ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “এটি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ও একপেশে একটি রিপোর্ট, যা ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আশা করা যায় না।”

“নীতিমালা লঙ্ঘন করলে যে কোনো অ্যাকাউন্ট বা পেজ তারা সরাতে পারে। কিন্তু সেটার সাথে আওয়ামী লীগ ও সিআরআইকে জড়ানোটা- বিভিন্ন পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট দিয়ে সুনাম ক্ষুণ্ণের যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে, সম্ভবত তারই অংশ। ফেসবুক যাদের মাধ্যমে তথ্য নিয়েছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বিশ্লেষণ করা উচিত ফেসবুকেরই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের অধ্যাপক ও ফ্যাক্টওয়াচ সম্পাদক ড. সুমন রহমান বলছেন, বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো সামাজিক মাধ্যমকে নিজেদের প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করে থাকে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।

“তবে এটি ফেসবুকের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। ঘৃণা ছড়ায় বা ক্ষতিকর এমন কিছু থাকলে তা নিয়ে চাপ বাড়ে। আবার অনেক সময় কর্তৃপক্ষের অনুরোধেও এ ধরনের কনটেন্ট বা অ্যাকাউন্ট বা পেজ সরিয়ে ফেলে তারা,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
  • বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য ফেসবুক যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে - বিবিসিকে জানালো মেটা

  • ভুয়া ছবি থেকে ভুয়া কলাম, নির্বাচনের আগে ফেক নিউজ নিয়ে যত উদ্বেগ

  • সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসে কী ধরণের ঝুঁকিতে পড়বেন আপনি?

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতো এমন ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়েছে ফেসবুক - BBC News বাংলা (2)

ছবির উৎস, Meta

মেটার রিপোর্টে আরও যা বলা হয়েছে

মেটা তার রিপোর্টে বলেছে, “সমন্বিত অনির্ভরযোগ্য আচরণের জন্য আমরা ফেসবুক থেকে পঞ্চাশটি অ্যাকাউন্ট ও ৯৮টি পেজ সরিয়ে ফেলেছি। এই নেটওয়ার্কটি বাংলাদেশেরই এবং তারা বাংলাদেশের স্থানীয় অডিয়েন্সকে টার্গেট করেছিলো।”

এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর মোট প্রায় ৩৪ লাখ ফলোয়ার ছিল। একই সাথে এসব পেজ থেকে প্রায় ৬০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিজ্ঞাপনে ব্যয় করা হয়েছে।

ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এ ধরনের তৎপরতার পেছনে যারা আছে, তাদের কয়েকজনকে অনুসন্ধানের আগেই অটোমেটেড সিস্টেমেই চিহ্নিত করে অকার্যকর করা হয়েছে। তারা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কনটেন্ট পোস্ট করতো বা পেজগুলো চালাতো।

এর মধ্যে কিছু পেজ কাল্পনিক নতুন পরিচয় নিয়ে এবং অন্যগুলো বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোর নাম ব্যবহার করতো। আবার কিছু পেজ বিএনপির নাম ব্যবহার করতো এবং বিএনপি বিরোধী কনটেন্ট পোস্ট করতো।

এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর নেটওয়ার্ক ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), টিকটক, টেলিগ্রাম ও তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটসহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে রয়েছে বলে মেটার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতো এমন ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়েছে ফেসবুক - BBC News বাংলা (3)

ছবির উৎস, Getty Images

এই নেটওয়ার্ক প্রাথমিকভাবে বাংলাতেই কনটেন্ট পোস্ট করতো। তবে নিউজ ও বাংলাদেশের চলতি ঘটনাবলী ইংরেজিতেও প্রকাশ করা হতো।

এসব ঘটনাবলীর মধ্যে ছিল নির্বাচন, বিএনপির সমালোচনা, বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং নির্বাচন পূর্ব সহিংসতায় দলটির ভূমিকা, বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দলটির ভূমিকা।

“আমরা অভ্যন্তরীণ তদন্তের ফল হিসেবে এসব সন্দেহজনক ও অনির্ভরযোগ্য অতিরিক্ত তৎপরতা দেখতে পেয়েছি, যা গত বছর আমরা সরিয়ে দিয়েছি। আমরা সমন্বিত অনির্ভরযোগ্য আচরণের একটি নেটওয়ার্ক উন্মোচন করতে পেরেছি, যা এই রিপোর্টে বলা হয়েছে,” প্রতিবেদনে বলেছে মেটা।

এতে আরও বলা হয়েছে, “যদিও এগুলোর পেছনে থাকা ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় ও নিজেদের মধ্যকার সমন্বয়ের বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে যে যারা এগুলোর সাথে জড়িত তাদের সাথে আওয়ামী লীগ ও অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন এর যোগসূত্র রয়েছে।”

ড. সুমন রহমান বলছেন ফেসবুক হয়তো অ্যালগরিদম বা ফ্যাক্ট চেকিং বা আরও অন্য কোনো চ্যানেল ব্যবহার করে ভুয়া পেজ বা অ্যাকাউন্টগুলোর উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।

“এটা তারা ট্র্যাক করতে পারে চাইলে। খুব একটা জটিল বিষয় না। আর ফেসবুকের জন্য এটা নতুন কোনো কার্যক্রমও নয়। বরং ঘৃণার বিস্তার বন্ধ করতে বা ক্ষতিরোধের জন্য অনেক দেশেই এমনটা তারা করে। আর এটিও সত্যি যে সব জায়গাতেই সরকারগুলো সামাজিক মাধ্যমকে প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে ব্যবহার করতে চায়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতো এমন ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়েছে ফেসবুক - BBC News বাংলা (4)

ছবির উৎস, REUTERS

‘রিপোর্ট একপেশে ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট’

রিপোর্টে যেসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও সিআরআইয়ের কথা বলা হয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া। মি. বড়ুয়া একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকও।

“বিদেশে বসে যেসব অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয় কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাদের চরিত্র হনন করা হয় রিপোর্টে তো তাদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বাঁশের কেল্লাকে কী করলো সেটা তো ফেসবুক বললো না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

“এটি একটি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ও একপেশে রিপোর্ট। যাদের মাধ্যমে ফেসবুক তদন্ত করেছে বা তথ্য সংগ্রহ করেছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তদন্ত করা উচিত। এটি ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আশা করিনি।”

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন তারা মনে করেন যে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে মিসইনফরশেন ও ডিসইনফরমেশনে কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর নেতারা।

“অথচ তারা আওয়ামী লীগ ও সিআরআইকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছে। আমরা এ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করি। আওয়ামী লীগ ও সিআরআই কখনো কারও বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে না। একটি পরিপূর্ণ রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট একপেশে রিপোর্ট এটি,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
  • বেনজীর, আজিজের 'দুর্নীতি' ও ভারতে এমপি খুনের ইস্যুতে নানা প্রশ্ন আর সমালোচনা

  • উগান্ডা যেভাবে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে

  • ডোনাল্ড ট্রাম্প ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেন

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতো এমন ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়েছে ফেসবুক - BBC News বাংলা (5)

ছবির উৎস, Getty Images

যেভাবে কনটেন্ট অপসারণ করা হয়

বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছর অগাস্টে মেটার কর্মকর্তারা ঢাকায় এসে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলো।

পরে এ নিয়ে বিবিসি বাংলার ই-মেইলের জবাবে মেটা গুজব মোকাবেলা করতে ও ক্ষতিকর কনটেন্টের বিরুদ্ধে ফেসবুকসহ মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা জানিয়েছিলো।

তখন মেটা বলেছিলো, গুজব ঠেকাতে সারা বিশ্বে ৯০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে তারা।

বাংলাদেশে তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে, এর মধ্যে রয়েছে ফ্যাক্টওয়াচ, এএফপি ও বুম বাংলাদেশ।

গুজব ছড়ানো কনটেন্টের পাশাপাশি যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হয়, সেগুলোও ডিলিট করা হয় বলে তখন বলেছে মেটা।

আর কোনো বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে যাওয়ার পর সেই ঘটনা সংক্রান্ত সঠিক খবর বা পোস্টের লিংক বেশি করে প্রচার করা হয় যেন ব্যবহারকারীরা ঐ নির্দিষ্ট বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে পারে।

মেটা জানায়, তাদের প্ল্যাটফর্মের নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অনেকে কনটেন্ট তৈরি করে থাকে, যে বিষয়ে তারা ওয়াকিবহাল।

এরকম ঘটনা ঠেকাতে তারা নিয়মিত তাদের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমের উন্নয়ন করছে এবং সুশীল সমাজ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সাথে কাজ করছে বলে উঠে আসে মেটার বিবৃতিতে।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতো এমন ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়েছে ফেসবুক - BBC News বাংলা (2024)
Top Articles
Latest Posts
Article information

Author: Terence Hammes MD

Last Updated:

Views: 6080

Rating: 4.9 / 5 (49 voted)

Reviews: 80% of readers found this page helpful

Author information

Name: Terence Hammes MD

Birthday: 1992-04-11

Address: Suite 408 9446 Mercy Mews, West Roxie, CT 04904

Phone: +50312511349175

Job: Product Consulting Liaison

Hobby: Jogging, Motor sports, Nordic skating, Jigsaw puzzles, Bird watching, Nordic skating, Sculpting

Introduction: My name is Terence Hammes MD, I am a inexpensive, energetic, jolly, faithful, cheerful, proud, rich person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.